ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের উপায়।

 ঘরোয়া পদ্ধতিতে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের উপায়: 

থাইরয়েড কি?

মানবদেহে গ্ৰীবায় অবস্থিত একটি অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা থাইরয়েড গ্ৰন্থি যা আমাদের শরীরে থাকা থাইরয়েড হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যার হ্রাস-বৃদ্ধির প্রভাবে মানবজীবনে বহুল প্রভাব পড়ে। এই থাইরয়েড হরমোন অধিকমাত্রায় নিঃসৃত হলেও যেমন মানব শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঠিক তেমনই থাইরয়েড হরমোনের কম নিঃসরণের প্রভাবেও মানবদেহে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। চলতি কথায় অনেকেই থাইরয়েড বলতে মোটা থাইরয়েড এবং রোগা থাইরয়েডের ভিত্তিহীন ব্যাখ্যা দেন যা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে মোটা থাইরয়েড বা রোগা থাইরয়েড বলে কিছু হয় না, তবে থাইরয়েড হরমোন অধিকমাত্রায় নিঃসৃত হলে থাকে হাইপারথাইরয়েড বলে, আবার থাইরয়েড হরমোন সাধারনের তুলনায় কম নিঃসৃত হলে তাকে হাইপোথাইরয়েড বলা হয়।

শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য সঠিক আছে কিনা বোঝার উপায় কি?

শরীরে থাইরয়েড হরমোন সঠিক মাত্রায় না থাকলে মানবশরীরই তার প্রথম জানান দেয়। সাধারণত থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা সব বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায়। সদ্যজাত শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের মহিলা পুরুষ সব বয়সের মানুষের মধ্যেই থাইরয়েড হরমোনজনিত সমস্যা থাকতে পারে। এইধরনের সমস্যা সাধারণত জেনেটিকভাবে মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে প্রবাহিত হয়। মূলতঃ শরীরে আয়োডিনের ঘাটতি এই রোগের প্রধান উৎস হিসেবে ধরা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মহিলাদের বিবাহের পর শরীরের বিভিন্ন ধরনের হরমোনের পরিবর্তনের কারণে থাইরয়েড রোগটি অতি সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অনিয়ম এই হরমোনজনিত রোগের প্রধান কারণ। বিবাহের পর বেশিরভাগ মহিলাদেরই অন্যবাড়িতে গিয়ে নিজেদের মানিয়ে নিতে অনেক কষ্ট হয় এবং সেইসময়কার অনিয়মের ফলাফল হিসেবে দেখা দেয় শরীরে থাইরয়েড নামক রোগের উপস্থিতি। শরীরে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা আছে কিনা তা বোঝার সবচেয়ে বড়ো উপায় হলো চেহারার পরিবর্তন। হঠাৎ করেই শুকিয়ে যাওয়া কিংবা হঠাৎ করেই ফুলে যাওয়ার পিছনে স্বাভাবিকভাবেই থাইরয়েড হরমোনের ভূমিকা থাকে তাই ওজন মাত্রাতিরিক্ত কমলে বা বাড়লে অবশ্যই ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে হরমোন পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে।

 পাশাপাশি শরীরে অকারণ কাঁপুনি, মাত্রাতিরিক্ত ঘাম এবং দেহে পশমের পরিমাণ আচমকা বেড়ে গেলেও থাইরয়েডজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। দিনের মধ্যে প্রায়ই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছেন? কিংবা সবসময় ক্লান্তবোধ করছেন তাহলেও থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে। মেয়েদের প্রতিমাসের নিয়মিত ‌ঋতুস্রাবে বাধাগ্ৰস্ত হলে কিংবা পিরিয়ডের ব্লাড ফ্লো কমে গেলেও দায়ী করা হয় থাইরয়েড নামক হরমোনজনিত রোগকে। 

ঘরোয়াভাবে থাইরয়েডজনিত সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণের উপায় কি?

মানবদেহে থাইরয়েডজনিত সমস্যা হলে অবশ্যই হরমোনের ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার TSH, T3, T4 ইত্যাদি ব্লাড টেস্ট দিয়ে রোগীর শরীরে থাইরয়েডের মাত্রা সঠিক পরিমাণে আছে নাকি তা নির্ণয় করেন, এরপর মাত্রা কম বা বেশি হলে ডাক্তার ঔষধ প্রেসক্রাইব করেন। বাজারজাত বিভিন্ন থাইরয়েডের ঔষধ থাকলেও রোগীকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধসেবন করতে হবে। অনেকেই ঔষধসেবনের সময় নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন, তাদের অনেকেই বুঝতে পারেননা থাইরয়েডের ঔষধ ঠিক কোন সময়ে খাওয়া উচিত? সাধারণভাবে থাইরয়েডের ঔষধ ঘুম থেকে ওঠার পরেই খাবার খাওয়ার অন্তত একঘন্টা পূর্বে খাওয়া উচিত। ঔষধ খাওয়ার পর একঘন্টা কিছু না খেয়ে ঘরের কাজ অথবা সিম্পল এক্সারসাইজ করা ভালো। এরপর খাবার খাওয়া যেতে পারে। ঔষধ ছাড়া শুধু ঘরোয়াভাবে থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব। যেহেতু থাইরয়েডের ঔষধে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকেনা তাই নিয়মিত ঔষধ সেবন করা বাধ্যতামূলক। ঔষধ সেবনে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এলেও পার্মানেন্টভাবে ঔষধ ছাড়া যাবে না। থাইরয়েডের ঔষধ যদি ১০০পাওয়ারের হয় তাহলে থাইরয়েড ব্যালেন্সে এলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তা ৫০পাওয়ারের ঔষধে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই ঔষধ ছাড়া যাবে না।

 ঔষধের পাশাপাশি খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, সালগম, সোয়াবিন জাতীয় খাদ্য। অর্থাৎ সম্পূর্ণ ক্যাবেজ ফ্যামিলিকে বলতে হবে, "টাটা বাই বাই"। রান্নাঘরে বর্জন করতে হবে সোয়াবিন অয়েল এবং সোয়া সস্ ইত্যাদি। ঘরোয়াভাবে নিজের খাদ্যদ্রব্য বাছাই করে খাওয়া এবং সারাদিনে ৮ঘন্টা ঘুম থাইরয়েড সমস্যার সমাধানে ধন্বন্তরীর মতো কাজ করে। সবশেষে একটাই কথা পরিমিত আহার ও পরিমিত ঘুম মানবদেহের সকল সমস্যার সমাধান করে। ভালো খান, আনন্দে থাকুন, সুস্থভাবে বাঁচুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন